আবনা ডেস্কঃ ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী (র)-এর ২৯তম মৃত্যুবাষিকী উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে রাজধানীর ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে ‘মুসলিম উম্মাহ’র জাগরণে ইমাম খোমেনী (র)-এর চিন্তাধারার প্রভাব’-শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্সেস-এর প্রো-ভিসি ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও ইসলামি চিন্তাবিদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি এবং সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি দেহনাবী।
স্বাগত ভাষণ দেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা-এর কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়েদ মুসা হোসাইনী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশেদ আলম ভুইয়া এবং বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম আশরাফ উদ্দীন খান। ক্বারী মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামের কণ্ঠে পবিত্র কালামেপাক থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, “ইরানের ইসলামি বিপ্লব যখন সংঘটিত হয় তখন আমরা সবেমাত্র কিাশোর। আমরা টেলিভিশনে বিপ্লবের প্রতিবেদনগুলো দেখতাম। ফার্সি না বুঝলেও শ্লোগানগুলো আত্মস্থ করেছিলাম। যখন শুনতাম লাখো জনতা নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর রাস্তায় নেমে শ্লোগান দিতো ‘মার্গ বার শাহ’, ‘মার্গ বার আমেরিকা’, ‘মার্গ বার ইসরাইল’, ‘মার্গবার শোরাভি’। ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ইসরাইল আদু আল্লাহ’, ‘আমরিকা আদু আল্লাহ’ অর্থাৎ ‘শাহ নিপাত যাক’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক’, ‘রাশিয়া ধ্বংস হোক’, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই’, ‘আমেরিকা আল্লাহর দুশমন’, ‘ইসরাইল আল্লাহর দুশমন’। ইরানি জাতির এই যে উদ্দীপনা ও জাগরণ সেটি ছিল বিশ্বের এক বিস্ময়কর ঘটনা। একইসাথে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, রাজতন্ত্র, সমাজবাদ ও ইহুদি জায়নবাদকে ভ্রুক্ষেপ করে স্বতন্ত্র স্বাধীন মেজাজে ইরানের ইসলামি বিপ্লব কেবল ইরানের মাটি থেকে অংকুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দুনিয়ায়। ইরানের ইসলামি বিপ্লব দুনিয়ার মুসলমানের কাছে, মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সমগ্র মানবতার কাছে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। কোনোপ্রকার পার্থিব স্বার্থের পথে নয়, কেবলমাত্র খোদায়ী স্বার্থে একটি সামাজিক জাগরণ ঘটেছিল ইরানের ময়দানে যার ফলাফল কেবল ইরানি জাতিই নয়, নানা দেশের জনগণ জাতীয়ভাবে এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও অনেক উপকৃত হয়েছে। ব্যক্তি মানুষের বিকাশেও এ বিপ্লবের আলো কার্যকরি ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন দেশে ইসলামের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ সাধনে বিপ্লবের পর ইরানি সরকার ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যের ইসলামি জীবনদর্শনের বিকাশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা আর বিশ্ববিদ্যলয়সমূহে পৃথক বিভাগ চালু করা ও সেসব বিভাগে গবেষক ছাত্র-শিক্ষক তৈরি করে দিয়ে অনেক দিনের পুরোনো ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে সদা সচেষ্ট থেকেছে। ইমাম খোমেনী (র)-এর সুযোগ্য নেতৃত্বে ইরানের ইসলামি বিপ্লব ইসলাম সম্পর্কে অনেক প্রচলিত ধ্যানধারনাকে বদলে দিয়েছে। দলপুজা, গোষ্ঠীতন্ত্র, খণ্ডিত চিন্তাধারার আবদ্ধ জলাশয়কে বাঁধ ভেঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে দিয়েছে। সীমাবন্ধ চিন্তাধারাকে নিয়ে গেছে নিঃসীম নীলাকাশের কাছে অথবা বিস্তৃর্ণ সমূদ্রের কাছাকাছি।”
ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, “ইমাম খোমেনী (র) তথাকথিত কোনো আলেম ছিলেন না। তিনি ছিলেন একাধারে আলেম, আরেফ, আবেদ, দার্শনিক ও রাজনৈতিক নেতা। ইরফানী শিক্ষার আলোয় তিনি আত্মশুদ্ধির মহান দরোজায় প্রবেশ করতে পেরেছেন বলেই তাকে আমরা দেখি একজন ইনসানে কামেল আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে। কেবল বস্তুবাদী চিন্তাধারার বিশ্লেষণের কোনো খণ্ডিত ইসলামি ধ্যানধারণা তাঁর মাঝে ছিল না। তাঁর ইসলামি চিন্তা-চেতনার গভীরতার ভেতর আমরা প্রকৃত ইসলামের গভীরতা টের পাই। প্রকৃত বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই মিখাইল গর্বাচেভকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে এবং সত্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি যে ঐতিহাসিক পত্র লিখেছিলেন। এতে রয়েছে এই মহান নেতার অপরিসীম দূরদর্শিতার পরিচয় ও তুখোড় অনুমানশক্তির বাস্তব নমূনা। তিনি বলেছিলেন কমিউনিজমের ঠাঁয় হবে বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের জাদুঘরে। সত্যি সত্যি তাই হয়েছিল। কমিউনিজম ৭০ বছরের একটি ব্যর্থ মানবরচিত মতবাদ হিসেবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছিল।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, “ইমাম খোমেনী (র) পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র, বিষাক্ত ইসরাইলি নির্মমতা ও সমাজতন্ত্রের অসারতার প্রতি যেমন সচেতন ছিলেন তেমনি সচেতন ছিলেন লরেন্স অব এরাবিয়া ও হামফ্রের ষড়যন্ত্রের ফসল ইহুদি ব্রিটিশের চক্রান্তে মুসলিম সমাজে ছড়ানো ওহাবী ইজমের কুফল সম্পর্কেও। যা মুসলিম দুনিয়া থেকে মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য বিলীন করে দেয়াসহ আধ্যাত্মিক ও তাকওয়াভিত্তিক আত্মশক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
ইসলাম যে কেবল কোনো নির্দিষ্ট দল গোত্রের সম্পদ নয় তা ইমাম খোমেনী (র)-এর চিন্তাধারা ও ইরানের ইসলামি বিপ্লব থেকে বোঝা যায়। আজকে আমরা বিভিন্ন দল গোত্র নাম দিয়ে ইসলামের বিশালত্বের ক্ষতি করে ফেলেছি। কেবলমাত্র ইসলামের নামকরণের নামে নিজেরাই খণ্ড বিখণ্ড হয়ে এবং বিভিন্ন বিষয়কে খণ্ড বিখণ্ড করে কোনো বিষয়কে আত্মীকরণের মাধ্যমে আত্মস্থ ও পরিশোধিত করার পরিবর্তে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। ফলে যে বলিষ্ট শক্তিতে দাঁড়িয়ে থেকে ইয়াজিদি ব্যবস্থা ও স্বৈরতন্ত্র-রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসি চিত্তে দাঁড়াতে পারছি না। আত্মশুদ্ধির জায়গা থেকে সরে গেছি। আর আত্মশুদ্ধির পথ পরিক্রমা অতিক্রম প্রচেষ্টার অভাবযুক্ত নেতৃত্ব থেকে সুবিচার আশা করা যায় না।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম শমসের আলী বলেন, “বিপ্লবের পূর্বে ও বিপ্লবোত্তর ইরানে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কাজেই দুই সময়ে পার্থক্য নিরূপণ করা আমার পক্ষে সহজ হয়েছে। বিপ্লবের ঠিক পরপর আমি যখন ইরানে গেলাম তখন ইরানি জনগণের সমন্বিত ঐক্য সংহতির যে চিত্র আমি দেখলাম তাতে আমি আশান্বিত হলাম। তাদের ঐক্যের যে শক্তি তারা আত্মার ভেতর অর্জন করেছিল তা হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা। ইরানের রাজধানী তেহরান একটি বড় শহর। আমি দেখলাম ও শুনলাম প্রতিটি বাড়ির ছাদের শীর্ষে উঠে শ্লোাগন দিচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার’। সারা তেহরান প্রকম্পিত করে সেই ‘আল্লাহু আকবার’ শ্লোগানটি ধ্বণিত প্রতিধ্বণিত হলো। এই যে একতা ও বিশ্বাসের শক্তি যাকে দমন করার সাধ্য ছিল না শাহ বা আমেরিকা অথবা ইসরাইলের।”
তিনি বলেন, “বিপ্লবের আগে ইরানের বৃহত্তর জনগণ সুবিধাবঞ্চিত ছিল। সাধারণ জনগণের সাধ্যের ভেতর ছিল না অনেক উত্তম আহার করার অথবা ভালো কাপড় পরার। শাহী আমলগুলোতে ইরানের অনেক নারী পুরুষ বিভিন্ন দেশে নানাবিধ কাজকর্ম করত। আমাদের দেশে এসেও অনেকে আয়না চিরুনি বিক্রয় করত। কিন্তু বিপ্লবের পর ইরানি জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ পুরণ হয়েছে। তারা আজ মুসলিম বিশ্ব ও সারা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বিপ্লবের আগে ইরানি জনগণের ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেত না। বিপ্লবের পর ইরানের শিক্ষাদীক্ষার অনেক প্রসার ঘটেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় তারা উন্নতি লাভ করেছে। ইরানি সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের দরবারে উজ্জ্বল আসন দখল করে রেখেছে ঐতিহাসিকভাবে। শেখ, সাদী, রুমী, জামি, ওমর খৈয়াম, ফেরদৌসীকে কে না জানে। ইরান বিশ্বখ্যাত চলচিত্র নির্মাণ করেছে। অস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার জিতে নিচ্ছে। ইরানের পরমাণু বিজ্ঞান আজ আলোচিত। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সামাজিক কাজে ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। এক্ষেত্রে ইরানের ইসলামি নেতৃবৃন্দ কোনো সংকীর্ণতা দেখায়নি। কারণ সেটা ইসলামসম্মত নয়। রাসুল (স)-এর যুগে নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি তাদের রান্নাঘর ছাড়াও আরো দায়িত্ব পালন করেছে। ইরানেও আমরা তাই দেখি সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে তারা স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, আদালতে, স্টেশনে, বিমানবন্দরে, শপিং মলে সব জায়গাই রয়েছে। তাদেরকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকেতো রাখা হয়নি। তারা গাড়িও চালাচ্ছে তবে তা ইসলামের হিজাবের ভেতর দিয়ে। জাতির এ ইরানি জাতির এই যে ভেতরে-বাহিরে অসাধারণ এক পরিবর্তন এলো সেটা এই ক্ষণজন্মা মানুষটির জন্যে যিনি ছিলেন হযরত আলীর বংশধর। তিনি তার পূর্বপুরুষদের ব্যক্তিত্বের বিশালতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। হযরত আলী ইসলামের ইতিহাসে একজন বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি মালিক আশতারের কাছে যে প্রশাসনিক চিঠিপত্র দিয়েছিলেন সেই পত্রগুলো ছিল দুরদর্শী, তাৎপর্যপূর্ণ যা ইসলামের ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ হিসেবে অক্ষয় হয়ে রয়েছে।”
প্রধান অতিথি আরও বলেন, “আমরা খণ্ডিত ইসলামের অনুশীলন করে যাচ্ছি। আমরা নামাজ, রোজা, হজ, ওমরাহ পালন করে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের দেশ ও সমাজকে আল্লাহর হুকুমমতো পরিচালিত করছি না। ইরান থেকে আমাদেরও অনেক কিছু শেখার ছিল আমরা তা গ্রহণ করতে পারিনি। আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীবের (স) শিক্ষার আলোকে ইরানের এই অর্জন ইরানের একার নয়, তা সমগ্র মানবতার কারণ আমাদের মহান স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামিন বা সমগ্র জগতের স্রষ্টা। তিনি রাব্বুল মুসলেমিন নন। আমাদের রাসুল (সা) সমগ্র জগতের জন্যে রহমতস্বরূপ বা রাহমাতাল্লিল আলামিন। রাহমাতাল্লিল মুসলেমিন নন। আজকে পাশ্চাত্য দুনিয়া ইরানের সাথে শত্রুতা করে চলেছে। অথচ আমরা যে নিউ ওয়াল্ড অর্ডার বা নয়া বিশ্বব্যবস্থার কথা শুনি ইরানের সাথে সেই শত্রুতা নিরসন করে নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে ইরানের অর্জন ইসলামি নৈতিকতা ও মানুষের সত্যিকার অধিকার প্রদানের বিষয়টি যুক্ত হলে পৃথিবী শান্তির রাজ্যে প্রবেশ করতে পারত।”
ড. এম শমসের আলী আরও বলেন, “ইমাম খোমেনী (র) একজন প্রজ্ঞাবান দার্শনিক ও দুরদর্শী ইসলামি নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন সর্বপ্রকার গোড়ামী মুক্ত। তার একটি অসাধারণ উক্তি আমার হৃদয়ে বাজে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যখন ইসলামিক সাইন্স বা ইসলামিক জিওমেট্রির কথা বলি আসলে ইসলামিক সাইন্স বা ইসলামিক জিওমেট্রি বলতে কিছু নেই। বিজ্ঞান বিজ্ঞানই। জিওমেট্রি জিওমেট্রিই। আমরা ইসলামিক সাইন্স বা ইসলামিক জিওমইট্র বলতে সেটাই বোঝাতে চাই যে, বিজ্ঞানের সাথে নৈতিকতার বিষটি জড়িত থাকতে হবে। বিজ্ঞানকে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না।’ তিনি তার চিন্তাধারাকে সমাজে বাস্তবায়িত করেছিলেন জনগণকে সাথে নিয়ে, জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়ে নয়। তিনি উগ্রতা বা সন্ত্রাসের পথ বেছে নেননি। বরং তার জাতির উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইসলাম সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনা। উগ্রতা বা গোড়ামীকে সমর্থন করে না।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত জনাব আব্বাস ভায়েজি দেহনাবী বলেন, ‘‘আমেকিার পুতুল সরকার রেজা শাহ পাহলভীর স্বৈরশাসন থেকে আমরা যখন স্বাধীনতা লাভ করলাম তখন আমাদের অনেক কিছুই ছিল না। আমরা জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষা ব্যবস্থাপনায়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা অনেক পেছনে ছিলাম। আপনাদের বাংলাদেশ থেকে ডাক্তারদের নিয়োগ দিয়েও আমাদের চিকিৎসাকর্ম চালাতে হয়েছে। আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় বিপ্লবকে মেনে নিতে পারেনি পরাশক্তি আমেরিকা ইহুদিবাদী ইসরারাইলসহ পাশ্চাত্য বিশ্ব। আমাদের কঠিন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এতে ধ্বংস হয় নগর গ্রাম, ধ্বংস হয় আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। কিন্তু ইমাম খোমেনী (র)-এর মহান নেতৃত্বে আমাদের এই পরিবর্তনকে আমরা পুনর্গঠনের সংগ্রামের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলাম শত্রুদের চতুর্মুখী যড়যন্ত্রের পরেও। ইমাম খোমেনী (র)-এর অবর্তমানে তাঁর সুযোগ্য ছাত্র রাহবার সাইয়েদ আলী খামেনেয়ীর নেতৃত্বে আমরা ক্রমশ এগিয়ে চলেছি। আল্লাহর রহমতের আমরা এখন পরমাণু শক্তিসম্পন্ন জাতি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা আল্লাহর রহমাতে একটা দৃঢ় অবস্থানে আমাদের নিজেদেরকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি।
আমরা যখন ইমাম খেমেনী (র)-এর নেতৃত্বে মহান ইসলামি বিপ্লব সফল করি তখন সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বে যেমন মিশরে, তুরস্কে, তিউনেশিয়ায়, মালয়েশিয়ায়, আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে এমনকি সৌদি আরবেও একটি পরিবর্তনের হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু সেই আলোকোজ্জ্বল পরিবর্তনের হাওয়াকে সব দেশের জনসাধারণ দুঃখজনকভাবে তাদের অনুকূলে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমরা সফল হয়েছি এবং সফলতার পথে এগিয়ে চলেছি।”
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশে খণ্ডিত ইসলাম চর্চা হয় কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত দিকগুলো চর্চা হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা)-মদীনায় যে ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইমাম খোমেনী (র) সেই সমাজের মতো একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই আন্দোলন করেছিলেন। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের আওয়াজ অনেকে শুনতে পেয়েছেন অনেকে একে গ্রহণ করেছেন; প্রভাবিত হয়েছেন এর আলোকে। ফিলিস্তিন ও লেবাননের জনগণকে উৎসাহিত করেছে আমাদের জাগরণ। ইমাম খোমেনী (র)-এর ব্যক্তিত্বের বিশালতা, তাঁর তাকওয়া এবং আল্লাহর তরফ থেকে সহযোগিতা প্রাপ্তির ফলে পরাশক্তিসমূহের সকল চক্রান্ত ভেদ করে আমরা দাঁড়িয়েছি ইনশাল্লাহ আপনাদেরকে নিয়ে আমাদের সফলতার ৪০তম বার্ষিকী উৎযাপন করতে সক্ষম হব। পবিত্র মাহে রমজানে আমাদের এটাই আজ কামনা থাকবে যে, আমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে কুরআনের পথে।”
স্বাগত ভাষণে ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়েদ মুসা হোসাইনী বলেন, ‘‘ইমাম খোমেনী (র) ছিলেন একজন মুজাহিদ, বিশিষ্ট আলেম, মুজতাহিদ, চিন্তাবিদ, দার্শনিক, ফকিহ, আরেফ, ধর্মীয় নেতা ও ইসলামি বিপ্লবের রূপকার। ইসলামি জাগরণে তার প্রচেষ্টা ও চিন্তা দর্শনের জন্যে তিনি অমর হয়ে আছেন। তাঁর চিন্তাধারা ছিল বিশুদ্ধ ইসলামি চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি মহান আল্লাহর উপর নির্ভর করে ইরানের জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্বেও মাধ্যমে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বিপ্লবের বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন এবং ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইমাম খোমেনী (র)-এর ইসলামি চিন্তার পুনর্জাগরণী দর্শন, অনুপ্রেরণা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বই ইরানের জনগণকে সচেতন ও জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছে। এই বিপ্লবের বড় অর্জন হলো স্বাধীনতা, মুক্তি ইসলামের উপর ভিত্তি করে ইরানে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা।”
প্রবন্ধকার দৈনিক নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার তাঁর প্রবন্ধে বলেন, “ইমাম খোমেনী (র)-এর চিন্তাধারার প্রভাবের ব্যাপারে আলোচনা করতে হলে তাঁর সময়, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রেক্ষিতকে বিবেচনায় আনতে হবে। দুনিয়ার এক প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইরানে রয়েছে হাজার বছরের ইসলামি ঐতিহ্য। শেখ সাদী ও জালালউদ্দীন রুমীর মতো কবি দার্শনিক মধ্যাপ্রাচ্যে থেকে পূর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়াকে আালোকিত করে রেখেছেন শতশত বছর ধরে। ইরানেই তৈরি হয়েছে হাফিজ সিরাজী, ফেরদৌসী, ওমর খৈয়ামের মতো মহাকবি-চিন্তাবিদ। উপমহাদেশের আলেম সমাজ এখনো বিখ্যাত ইরানি কবিদের উদ্ধৃতি তাঁদের বয়ানে ব্যবহার করেন। ইমাম খোমেনী সেই ঐতিহ্যেরই ধারক।”
আলোচক হিসেবে হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ আশরাফ উদ্দীন খান বলেন, ‘‘পবিত্র কুরআনে সুরা মুহাম্মদের শেষ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ‘যদি তোমরা পেছর ফিরে যাও আল্লাহপাক এমন এক জাতিকে তোমাদের পরিবর্তে বাছাই করবেন যারা তোমাদের মতো হবে না’। এই আয়াত যখন নাজিল হয় তখন সালমান ফারসি (রা)-সহ অনেক সাহাবী রাসুল (স)-এর পাশে উপস্থিত ছিলেন। সাহাবীরা রাসুল (সা) কে প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (স) যদি আমরা পেছন ফিরে যাই তবে আল্লাহপাক আমাদের পরিবর্তে কোনো জাতিকে বাছাই করবেন। তখন মহানবী (স) সালমান ফারসী (রা)-এর উরুতে আঘাত করে বললেন এই ব্যক্তি ও তাঁরা জাতি। শপথ তাঁর যার হাতে আমার জীবন, ঈমান যদি আকাশের সুরাইয়া তারকাতেও ঝুলে থাকে তবে সালমান ও তাঁর জাতি তা পাবে। সালমানের জাতিই হচ্ছে আজকের ইরানি জাতি। সুরা মুহাম্মদের এই আয়াতের তফসির এবং ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ) বর্ণিত একটি হাদিস মূল্যায়ন করলে সেটা ইরানের এই বিপ্লব এবং এর রূপকার ইমাম খোমেনী (র)-এ দিকে বর্তানোর খুবই সম্ভাবনা থাকে। ইমাম জয়নাল আবেদিন (আ) বলেছিলেন, কোম থেকে এক ব্যক্তি ওঠে দাঁড়াবে এবং একটি পদক্ষেপ নেবে এবং তার নির্দেশে তাঁর জাতি এমন এক শাষণ ব্যবস্থা কায়েম করবে যে এর ভার তারা ইমাম মাহদী (আ) ছাড়া আর কারো হতে তুলে দেবে না। মহাজ্ঞানী আল্লাহপাক ভালো জানেন। তবে বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের আচার আচরণ, পরাশক্তির কাছে তাদের নতজানু হওয়া ও বিশ্বমুসলিমের উপর নানাবিধ অত্যাচারের প্রেক্ষিতে একমাত্র ইরানকেই খোদায়ী শক্তির উপর ভরসা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেখে সেই আয়াত ও সেই হাদিসের তফসিরই মনে ভেসে ওঠে। হয়তো এ জাতিই সেই জাতি এবং এ নেতাই সে নেতা।”
প্রবন্ধকার আরও বলেন, “ইরানের ইসলামি বিপ্লব নির্যাতিত মুসলমানদের মনে আশা সঞ্চার করেছে। ইমাম খোমেনী (র) মাহে রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘আল কুদস দিবস’ ঘোষণা করে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ও বিশ্ব মানবতার মধ্যে আল কুদস মুক্তি চেতনার আগুন ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনে হামাস ও লেবাননে হিজবুল্লাহ নামের এমন দুটি বাহিনী তৈরি করে দিয়েছেন যে আক্রমণকারী জালিম যায়নবাদী ইসরাইলের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইরানে ইমাম খোমেনী বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করেছেন ইরানের জনগণকে সাথে নিয়ে। তিনি জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেননি। যা কিছু করেছেন জনগণকে সাথে নিয়ে এবং তাদের সাথে পরামর্শ করেই। তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র করেছেন এবং অভিভাবক হিসেবে বেলায়তে ফকিহ’র নেতৃত্ব কায়েম করেছেন। ‘বেলায়ত’ শব্দের অর্থ ‘অভিভাবকত্ব’। ‘বেলায়েতে ফকিহ’ অর্থ ‘ফিকাহবিদ আলেমদের অভিভাবকত্ব’। কিন্তু ইরানে সংসদ রয়েছে, জনপ্রতিধিত্বশীল সরকার রয়েছে। সেখানে ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন হয় ও পরিবর্তন হয়। রাষ্ট্রের কার্যক্রম সংসদ পরিচালনা করে। জাতীয় পর্যায়ে কোনো সমস্য দেখা দিলে রাহবার সেটির সমাধানে পরামর্শ দান করেন বা ইসলামি বিধানমতে ফতোয়া দেন। ইমাম অপূর্ব একটি সমন্বয় ঘটিয়েছেন ইসলামের আধ্যাত্মিকতার সাথে প্রজাতন্ত্রের। ইমাম খোমেনী (র)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী রাহবার সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী বিশ্ব মুসলিমের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আলম ভূইয়া বলেন, “ইমাম খোমেনী (র) ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। যার অন্তর ছিল আধ্যাত্মিক শক্তির আলোয় আলোকিত। তাঁর চিন্তা চেতনা ও স্বপ্নকে তিনি সফল করে দেখিয়েছেন। ইরানের ইসলামি বিপ্লব ছিল এক স্বতন্ত্র বিপ্লব যা কোনো পরাশক্তির ইন্ধনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কোনো জাগতিক শক্তির চিন্তাধারাকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে তা আপতিত হয়নি বরং এটা খোদায়ী ইচ্ছার ফসল ছিল। ইমাম পাশ্চাত্য গণতন্ত্র কিংবা সোভিয়েত সমাজতন্ত্রেও তথাকথিত জাগতিক চিন্তাধারায় কোনো পরিবর্তন সাধন করেননি। বরং খোদায়ী ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন এবং খোদায়ী বিধানের আওতাতেই মানুষের জাগতিক সমস্যার সামাধানে সচেষ্ট হয়েছেন। তিনি মানুষকে ইসলাম জোর করে চাপিয়ে দেননি বরং জনসংহতির ভিত্তিতে জনগণকে সাথে নিয়েই সেটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে যাননি বরং ইরানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের পর সরকার ব্যাবস্থায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সমন্বিত করেছেন মাত্র।
দিওয়ানে ইমাম খোমেনী (র)’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
সেমিনারে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈশা শাহেদী অনুদিত ও ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান সম্পাদিত ইমাম খোমেনী (র)-এর একটি বৃহৎ কাব্য সংকলন ‘দিওয়ানে ইমাম খোমেনী (র)’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সভায় ইসলামি চিন্তাবিদ ও কবি ড মুহাম্মদ ঈশা শাহেদীকে সনদ প্রদান করা হয় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।
মোড়ক উন্মোচনের প্রাক্কালে অনুবাদক কবি ড. ঈশা শাহেদী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “বস্তুত সমকালীন ইতিহাসের সর্বাধিক আলোচিত ইসলামি বিপ্লবের সফল নেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী ইমাম খোমেনীর পরিচয় তিনি একজন রাজনৈতিক ও বিপ্লবী নেতা। তবে এটিই কি তার আসল পরিচয়? প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতা। কিন্তু ইমাম খোমেনীর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বাইরের দুনিয়া খুব কমই জানে। এর কারণ, তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই সাধারণত ফার্সি থেকে অনূদিত হয়ে বাইরে এসেছে। তদুপরি ইমাম খোমেনীর আরেকটি পরিচয় ১৯৮৯ সালে ৮৮ বছর বয়সে তার ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত খোদ ইরানের মানুষও জানত না। সেটি হল, তার কবিত্ব। এই বইয়ের ভূমিকা ও তৎসঙ্গে তার পুত্রবধু ফাতেমার একটি পত্র পাঠ করলে বুঝা যাবে, কীভাবে এই রহস্যটি এতদিন গোপন ছিল এবং কীভাবে কবিত্ব ও কবিতা ইমাম খোমেনীর নিত্যসঙ্গী ছিল। সুফিবাদের অতলান্তের এই ভাবধারাকে বাংলায় রূপান্তরিত করার দুরূহ কাজটি করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। ইরানি কালচারাল কাউন্সেলর ড. রেযা হাশেমীর পরামর্শে আমার অনুবাদের কাব্যরূপ পরিমার্জনায় বরেণ্য কবি আল মাহমুদের সহায়তা নিয়েছি। তাকে আমি পড়ে শোনাতাম। আর তিনি প্রয়োজনীয় শব্দ সংযোজন বা বিয়োজন করতেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রথম দিককার ৩৩টি কবিতার কাব্যরূপ সমন্বিত করা হয়। এই গ্রন্থে ইমামের লেখা ১৪৭টি গজল, ১১৮টি রূবাই, ২টি মুসাম্মাত, ১টি তারজীবান্দ, কয়েকটি কিতআ ও কতিপয় বিক্ষিপ্ত বয়েত সংকলিত হয়েছে।
এই কাব্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে সুধি হিসেবে মিলনায়তনে কবি ড. শহিদুল্লাহ আনসারী, কবি মহিউদ্দিন আকবর, কবি রহমতুল্লাহ খন্দকার, কবি জাফর পাঠান, কবি আমিন আল আসাদ, কবি তাজ ইসলাম, কবি ও মর্সিয়া লেখক শাহনেওয়াজ তাবীব, কবি মেহাম্মদ হোসেন আদর, কবি ক্বারী ওবায়দুল্লাহ, কবি রফিক লিটন, কবি শাহজাহান মুহাম্মদ, কবি মুহাম্মদ ইসমাইল, লেখক অনুবাদক নিজামুল হক, ক্বারী আলমগীর হোসেন মোল্লাহ, প্রত্যাশা সম্পাদক আসিফুর রহমান, নিউজলেটারের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। #
৪ জুন ২০১৮ - ১৮:০৯
News ID: 896269

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম শমসের আলী বলেন, “বিপ্লবের পূর্বে ও বিপ্লবোত্তর ইরানে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কাজেই দুই সময়ে পার্থক্য নিরূপণ করা আমার পক্ষে সহজ হয়েছে। বিপ্লবের ঠিক পরপর আমি যখন ইরানে গেলাম তখন ইরানি জনগণের সমন্বিত ঐক্য সংহতির যে চিত্র আমি দেখলাম তাতে আমি আশান্বিত হলাম। তাদের ঐক্যের যে শক্তি তারা আত্মার ভেতর অর্জন করেছিল তা হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা। ইরানের রাজধানী তেহরান একটি বড় শহর। আমি দেখলাম ও শুনলাম প্রতিটি বাড়ির ছাদের শীর্ষে উঠে শ্লোাগন দিচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার’। সারা তেহরান প্রকম্পিত করে সেই ‘আল্লাহু আকবার’ শ্লোগানটি ধ্বণিত প্রতিধ্বণিত হলো। এই যে একতা ও বিশ্বাসের শক্তি যাকে দমন করার সাধ্য ছিল না শাহ বা আমেরিকা অথবা ইসরাইলের।”